শনিবার, ১৮ জানুয়ারী ২০২৫, ০১:২১ পূর্বাহ্ন
ভয়েস অব বরিশাল ডেস্ক॥ মাহাবুব হোসেন (২৯) বরিশাল নগরীরতে ভ্যানে করে শাক-সবজি বিক্রি করেন। গতবছর আগস্টে রাজধানী ঢাকার চাকরি ছেড়ে বরিশালে আসেন তিনি। এরপর থেকেই নগরীর বিভিন্ন এলাকায় ঘুরেঘুরে এভাবে উপার্জনের পথ বেছে নিয়েছেন৷।
চলমান কঠোর লকডাউনের মধ্যে এভাবে বাড়ি বাড়ি গিয়ে পণ্য বিক্রি করতে গিয়ে আগের চেয়ে দিগুণ লাভ করছেন এই ভ্রাম্যমাণ ব্যবসায়ী।
তিনি বলেন, করোনার মধ্যে শহরের মানুষজন বাজারে যেতে চায় না। বর্তমান লকডাউনে অনেকের পক্ষে বাইরে বের হওয়াও সম্ভব নয়। তাই এসময় ভ্যানে করে নিত্যপ্রয়োজনীয় শাক-সবজি বিক্রি আগের তুলনায় কয়েকগুণ বেড়ে গেছে। আমাকে প্রতিদিন শতাধিক পরিবারের কাছে যেতে হচ্ছে।
বরিশাল নগরীর বিভিন্ন অলিগলি থেকে শুরু করে সড়কের পাশে হরহামেশাই চোখে পরে মাহাবুবের মতো নানা ধরনের ভ্রাম্যমাণ ব্যবসায়ী। ছোট একটি ভ্যানগাড়ির ওপর মনোহারি সামগ্রীর পশরা সাজিয়ে নিজেদের কর্মসংস্থান নিজেরাই সৃষ্টি করেছেন তারা।
চলমান লকডাউন এবং করোনা পরিস্থিতিতে এসব ভ্রাম্যমাণ ব্যবসায়ীরা নগরবাসীর স্বাস্থ্যগত সুরক্ষায় অবদান রাখছেন বিশেষভাবে। এছাড়া নানাভাবে ভূমিকা রাখছেন স্থানীয় ও জাতীয় অর্থনীতিতে।
চলমান লকডাউনে বাড়ির বাইরে বের হওয়ায় আছে নানা নিষেধাজ্ঞা। কাঁচাবাজার সহ অন্যান্য দ্রব্যাদির দোকানসমূহও সবসময় খোলা থাকছে না। এরওপর বাজারে গিয়ে পণ্য সংগ্রহে আছে সংক্রামিত হবার ঝুঁকি। এসব সমস্যার সমাধানে সবচেয়ে বেশি কার্যকরী হচ্ছে ভাসমান ব্যবসা।
কাঁচাবাজার ফলমূল থেকে শুরু করে নিত্য প্রয়োজনীয় প্রায় সকল পণ্যের সমাহার নিয়ে এলাকায় এলাকায় পৌঁছে দিচ্ছেন এসব ব্যবসায়ীরা। এছাড়া করোনাকালীন সংকটময় সময়ে অর্থনীতির চাকা সচল রাখতেও এসব ব্যবসায়ীদের ভূমিকা অনেক। প্রামাণ্য কোনো হিসাব না থাকলেও বহু মানুষ করোনা ভাইরাসের সংক্রমণের সময় চাকরি হারিয়ে বর্তমানে এ ধরণের ব্যবসায় জড়িত।
এছাড়া স্বল্প পূঁজিতে অধিক লাভের সম্ভাবনা থাকায় অনেকেই এ ধরণের ব্যবসায় নিজেদের ভাগ্য পরীক্ষা করছেন। এসব কারণে কর্মহীন সমস্যার কিছুটা লাঘব ঘটছে এ অঞ্চলে।
নগরীজুড়ে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা এসব ভাসমান ব্যবসা ভোক্তা ও বিক্রেতা দুই শ্রেণীর মানুষকেই করোনাকালীন পরিস্থিতিতে বিশেষ কিছু অর্থনৈতিক সুবিধা দিচ্ছে বলে নিশ্চিত করেন বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের শিক্ষক রিফাত ফেরদৌস।
তিনি জানান, মহামারির এই এক বছরে খাদ্য পন্যের ভাসমান ব্যবসায়ীদের কারণে জনসাধারণের স্বাস্থ্যগত সুরক্ষা নিশ্চিত হবার পাশাপাশি কিছু অর্থনৈতিক সুবিধা আলাদাভাবে পাওয়া গেছে।আর এতে করে সরকারও করোনাকালীন বিভিন্ন চাপ থেকে মুক্তি পেয়েছে।
তিনি বলেন, নামমাত্র পূঁজিতে এই ব্যবসা করতে পারার কারণে করোনাকালীন সময়ে কর্ম হারানো অনেকে এ ধরণের ব্যবসায় যুক্ত হচ্ছে।
এছাড়া দোকানের মাধ্যমে ব্যবসা পরিচালনা করতে গেলে আলাদা যে খরচ লাগতো সেগুলো ভাসমান ব্যবসায়ীদের লাগছে না। ফলে গতানুগতিক বাজার ব্যবস্থা এড়িয়ে এভাবে ব্যবসা পরিচালনা করে অধিক লাভবান হবার সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। এভাবে ব্যবসার সুযোগ সৃষ্টি না হলে বর্তমান পরিস্থিতিতে অনেককে সরকারের বোঝা হয়ে থাকতে হতো।
এই শিক্ষক আরো বলেন, ক্রেতারাও ভাসমান ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে পণ্য কিনে লাভবান হচ্ছেন। বাজারে গিয়ে পণ্য কিনতে ভোক্তাকে যে আলাদা সময়, শ্রম ও যাতায়াত খরচ ব্যয় করতে হতো ভাসমান ব্যবসায়ীর কাছ থেকে পণ্য কিনতে সেসবের দরকার হচ্ছে না।
এছাড়া লকডাউনে বাজার পরিচালনায় নিষেধাজ্ঞার কারণে পণ্য সংগ্রহে ভোক্তাকে যেসব সমস্যা পোহাতে হতো সেগুলো থেকে মুক্তি দিয়েছে ভাসমান ব্যবসায়ীরা।
এদিকে ভাসমান ব্যবসায়ীরা নগরবাসীর স্বাস্থ্যগত সুরক্ষা নিশ্চিত করে লকডাউন সফল করতেও ভূমিকা রাখছে বলে নিশ্চিত করেন বরিশাল সিটি কর্পোরেশনের স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. মোঃ ফয়সাল হাজবুল।
তিনি বলেন, বাজারে গিয়ে পণ্য সংগ্রহ করতে গেলে অনেক মানুষের সমাগমে পরতে হয় ভোক্তাকে। বিশেষ করে কাঁচাবাজারে ভীড় লেগে থাকাতো আমাদের সংস্কৃতির সঙ্গেই মিশেগেছে। কিন্তু ভাসমান ব্যবসায়ীরা নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যাদি নিয়ে ভোক্তার দোরগোড়ায় পৌঁছে যাচ্ছে। ফলে করোনায় সংক্রামিত হবার সম্ভাবনা কমাতে অনেকখানি সহায়তা করছে এসব ব্যবসায়ীরা।
Leave a Reply